কম্পিউটার প্রসেসর এর পার্থক্য ও ভাল প্রসেসর চেনার উপায়

কম্পিউটার প্রসেসর এর পার্থক্য ও ভাল প্রসেসর চেনার উপায়


বন্ধুরা আপনারা নতুন ল্যাপটপ বা ডেস্কটপ কেনার সময় কনফিউজড হয়ে যান যে কোন প্রসেসরটি কিনবেন  Core i3 নাকি Core i5, নাকি আবার Core i7, Core i9 সেখানে আবার আরেকটি কনফিউশন থাকে 6th Generation, 8th Generation নাকি 10th Generation কোনটা কিনবো। তো এতো কিছু বুঝতে হলে আমাদের অনেক অসুবিধা হয় যে কোন প্রসেসরটি নিবো, কোনটা আপনার জন্য ভাল হবে। আপনাদের এই কনফিউশন দূর করার জন্য আমার এই ব্লগটি পড়ুন। আশা করি আপনার জন্য কোন প্রসেসরটি ভাল হবে, কোন প্রসেসর দিয়ে আপনি কম্পিউটার তৈরি করবে সবকিছু ভাল ভাবে বুঝতে পারবেন।

প্রথমে কথা বলি প্রসেসর এর জেনারেশন নিয়ে:

যতো দিন দিন টেকনোলজি আপডেট হচ্ছে  Core i3, Core i5, Core i7, Core i9 এই প্রসেসরের জেনারেশন আপডেটের সাথে সাথে টেকনোলজিকে ইমপ্রুভ করা হচ্ছে। এক্ষেএে আমরা একটা টার্মের কথা শুনি যে 7 ন্যানো মিটারের ওপর বেষ্ট প্রসেসর 10 ন্যানো মিটার, 14 ন্যানো মিটার, 20 ন্যানো মিটার। আমাদের প্রসেসরের ন্যানো মিটার যতো কম হবে প্রসেসরটি ততো ভাল হবে, পাওয়ার অ্যাফিসিয়েন্ট হবে, ততো ফাস্ট কাজ করবে। এবার ন্যানো মিটার কি সেটা ভালভাবে বলি। প্রসেসরে থাকা ট্রানজিস্টরের দুই প্রান্তের মধ্যবর্তী দূরত্বকে ন্যানো মিটার বলে। এখন প্রশ্ন আসতে পারে দূরত্ব কম হলে প্রসেসরটির ভাল হবে কি করে, ভাল কাজ করবে কি করে ? উত্তর: একটা ট্রানজিস্টরের ন্যানো মিটার যদি বেশি হয় তাহলে এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ডাটা ট্রান্সফার করতে অনেক সময় লাগবে কিন্তু এই ন্যানো মিটার বা দূরত্ব যদি কম হয় তাহলে ট্রানজিস্টর ডাটা দ্রুত পাঠাতে পারবে সময় কম লাগবে যার ফলে প্রসেসরটি ফাস্ট কাজ করবে, ডাটা ট্রান্সফারে পাওয়ার ফুল হবে। আর প্রসেসর এর কাজ হলো ডাটা ট্রান্সফার করা। আপনি একটা কমান্ড দিলেন ন্যানো মিটার কম হওয়ায় সে দ্রুত কাজটি করে দিলো যার ফলে আপনার কাজটা খুব দ্রুত হলো। শুধু মাএ ন্যানো মিটার নয় যতো দিন যায় ততো WiFi ও Bluetooth এর ভার্সন ও কিন্তু আপডেট হয়। 11th Generation থেকে শুরু করে এর ওপরে যতো গুলো Generation আছে সব গুলোতে WiFi 6, Bluetooth 5 এগুলো সাপোর্ট রয়েছে। আপনি যদি 10th Generation এর নিচের ভার্সনে প্রসেসর ব্যবহার করে থাকেন বা কিনে থাকেন তাহলে WiFi, Bluetooth চালানোর জন্য আলাদা Adapter কিনে ব্যবহার করতে হবে। বর্তমানে আপডেট প্রসেসরে এগুলো ম্যানুয়ালি দেওয়া রয়েছে। তাই আপনারা যখন নতুন কোন প্রসেসর নিবেন Core i3, Core i5, Core i7, Core i9 এগুলো কিন্তু কোন ম্যাটার না। বেশি ম্যাটার করে কোন Generation এর প্রসেসর নিচ্ছে যতো আপডেট এর প্রসেসর নিবেন ততো পাওয়ারফুল থাকবে, ফাস্ট কাজ করবে। আমার মতে আপনারা সব সময় চেষ্টা করবেন 10th Generation থেকে শুরু করে এর ওপরে প্রসেসর নেওয়ার।

আপনারা এবার বুঝতে পেরেছেন যে লেটেস্ট Generation এর দিকে যাওয়া উচিত। কিন্তু আপনারা এখনো ভালভাবে বুঝতে পারেনি যে কোন প্রসেসরটি কিনবেন i3 কিনবে নাকি i5 নাকি i7, i9 তো চলুন এই বিষয়টি ভালভাবে ক্লিয়ার করে দেই।

প্রথমে বলি এই প্রসেসরের মধ্যে পার্থক্য কি : প্রথমতো হচ্ছে Core যতো প্রসেসরের ডিজিট বাড়ে 3 থেকে 5, 5 থেকে 7 সেখানে Core ও বাড়ে Duel Core, Quard Core, Octa Core এই ভাবে কোরও বাড়ে। আরেকটা জিনিস বাড়ে সেটা হচ্ছে Thread । Thread কি বোঝার আগে আমাদের বুঝতে হবে হাইপার থ্রেডিং। হাইপার থ্রেডিং হচ্ছে আমাদের অপারেটিং সিস্টেমকে এক প্রকার বোকা বানানো। আমাদের কম্পিউটারে যদি দুইটা কোর থাকে সেখানে আমাদের অপারেটিং সিস্টেমকে বোকা বানিয়ে মানে আমাদের অপারেটিং সিস্টেম মনে করবে চারটে কোর রয়েছে। যদি চারটে থাকে সেখানে সে মনে করবে আটটা কোর রয়েছে। সে ক্ষেএে আমাদের প্রসেসর অনেক ফাস্ট কাজ করবে। এর জন্য আমার শুনি আমাদের i3 প্রসেসরের 2Core 4 Thread, 4Core 8Thread সে ক্ষেএে কোর ও থ্রেড যতো বাড়বে ততো কিন্তু প্রসেসরের পাওয়ার ও বেড়ে যাবে। আর এই কোর থ্রেড বাড়ার সাথে সাথে প্রসেসর গুলো আপডেট হতে শুরু করে যেমন i3 থেকে i5, i7, i9 এই ভাবে প্রসেসর গুলো হয়ে থাকে। 

এর পর আসি ক্যাশ মেমরি কি : 

যতো Cash Memory বেশি হবে তো প্রসেসর ফাস্ট কাজ করবে। Cash Memory সোজা কথায় বলতে গেলে খুব পাওয়ারফুল একটি র‌্যাম। যেটার মধ্যে খুব important ডেটা বা আমারা যে গুলো নিয়ে সব সময় কাজ করি তার মধ্যে স্টোর করে রাখা হয়। এর সাইট 2MB থেকে 10MB এর মধ্যে হয়ে থাকে। এই মেমোরি খুব ছোট সাইজের হয়ে থাকে। কিন্তু এই 2MB থেকে যখন 10MB তে যাবে সে ক্ষেএে প্রসেসরের মধ্যে খুব হিউজ ইমপ্রুভমেন্ট দেখতে পাওয়া যায়। i3 থেকে i5, i7, i9 এই ভাবে যখন যাবে তখন Cash Memory ও বাড়বে। 

এবার আসি প্রসেসরের ক্লক স্পিড এ: 

আমরা শুনে থাকি যে 1.8 গিগাহার্জ, 2 গিগাহার্জ, 3 গিগাহার্জ, 4 গিগাহার্জ যতো Clock Speed বাড়বে ততো কিন্তু প্রসেসরের পাওয়ার বা কাজ করার ক্ষমতা বেড়ে যাবে। আমরা যখন i3 থেকে i5 এ যাব তখন কিন্তু Clock Speed ও বেড়ে যাবে।

আপনারা হয়তো এবার বুঝতে পেরেছেন যে i3, i5, i7, i9 এগুলোর মধ্যে কি কি পার্থক্য হয় এবং কি ভাবে সে গুলো হয়।

এবার আপনাদের বলবো কোন প্রসেসরটা আপনার জন্য ভাল। 

প্রথমে কথা বলি Core i3 প্রসেসরকে নিয়ে:

Core i3 প্রসেসর একটি Duel Core প্রসেসর। কিন্তু কিছু কিছু Core i3 প্রসেসরের Thread যে টেকনোলজি কথা বলেছি হাইপার থ্রেডিং সেটা ব্যবহার করে চারটা থ্রেড তৈরি করা হয়েছে। একদম মডান যে লেটেস্ট 10th Generation Core i3 প্রসেসর আছে তাতে চারটি কোর দেখা যায় সেটা Quard Core প্রসেসর। যদিও এটাতে কোন হাইপার থ্রেডিং নেই। Core i3 প্রসেসর তাদের জন্য যারা ক্যাজুয়াল ইউজ করবেন। বেসিক ডে টু ডে লাইফের টার্চ, পাওয়ার পয়েন্ট, মাইক্রোসফট ওয়ার্ড, আফিস ব্যবহার করা বা গ্ৰাফিক্স কার্ড লাগিয়ে ক্যাজুয়াল গেমিং করতে চান, ছোট খাট ভিডিও এডিটিং করতে চান তাদের জন্য এই Core i3 প্রসেসর।

Core i3 প্রসেসরের পর এবার বলবো Core i5 প্রসেসর নিয়ে:

Core i5 প্রসেসরটি ও Duel Core আর এতে হাইপার থ্রেডিং ব্যবহার করে Quard Core বানানো হয়। Core i5 প্রসেসর আছে যে গুলোতে ছয়টা কোর ও দেখা যায়। i3 থেকে i5 এ যখন ইমপ্রুভ করবেন তখন Clock Speed বাড়বে, Cash Memory বাড়বে আরো অনেক ছোট ছোট ইমপ্রুভমেন্ট ঘটবে। Core i5 প্রসেসর মোটামুটি কম টাকার মধ্যে একটি প্রসেসর, কম টাকার মধ্যে ঠিকঠাক একটি প্রসেসর। এটা দিয়ে 10fps এ গেম খেলতে পারবেন আর বিশেষ করে যারা ছাএ আছে প্রগ্ৰামিং নিয়ে কাজ করে, ভিডিও এডিটিং করে তাদের জন্য এই প্রসেসরটি।

এবারে আসি Core i7 প্রসেসরে:

Core i7 প্রসেসরে ছয়টা কোর ও বারটা থ্রেড থাকে। অবার অনেক সময় ১০ টা কোরের i7 প্রসেসর দেখা যায়। Core i3, Core i5 প্রসেসরের তুলনায় এই প্রসেসরে cash money, clock speed, গিগাহার্জ অনেক বেশি ইমপ্রুভ করা হয়েছে। তাছাড়া এই Core i7 প্রসেসরটা মেইনলি যারা মোটামুটি সিরিয়াস গেমার বা ভিডিও ইডিটার যারা একটু কম বাজেটে ভাল প্রসেসর চান তাদের জন্য Core i7 প্রসেসরটা বেষ্ট। যারা মোটামুটি ভারি গেম খেলতে চান, কনটেন্ট ক্সিয়েটর তাদের জন্য বলো Core i7 প্রসেসরটি কিনতে। এটি Intel এর কম বাজেটে সব থেকে ভাল একটি প্রসেসর।

সবার শেষে আছে Core i9 প্রসেসর:

Core i9 প্রসেসর কনজিউমার গ্ৰেড প্রসেসরের মধ্যে বেষ্ট প্রসেসর। এখানে মোটামুটি মিনিমাম ১৮ টা কোর ও ৩৬ টা থ্রেড পর্যন্ত হয়ে থাকে। তাহলে বুঝতে পারছেন Core i9 প্রসেসর কতোটা পাওয়ারফুল। এখানে তাদেরকে রিকমেন্ট করবো যাদের বাজেটের কোন ধরনের ইসু নেই। যারা একেবারে ফুল প্রফেসনাল গেমার, ফুল প্রফেসনাল ভিডিও এডিটিং করতে চান তাদের জন্য এই Core i9 প্রসেসর ।

নোটিশ: এবার আমি প্রসেসর মিনিঙের ক্ষেএে ছোট একটি টিপস শেয়ার করবো। আমরা অনেক সময় দেখি প্রসেসর এর বক্সের গায়ে, গুগলে, কম্পিউটারের properties অপশন i9 9700k লেখা থাকে বা দেখা যায়। এটার মানে Core i9 এর 9th Generation প্রসেসর। i9 লেখা মানে Core i9 প্রসেসর ও এর পরে 9700k লেখা মানে প্রথমে 9 তাই 9th Generation যদি i7 10700k তাহলে এটি Core i7 এর 10th generation এর প্রসেসর। প্রথমে 10 আছে তাই এটি 10th generation এর প্রসেসর। এদের পিছনে যে k আছে অনেক সময় u লেখা ও দেখা যায়। এই K মানে এই প্রসেসরটি আমরা Over Clock করতে পারি। আর U থাকলে এটি মূলত একটি ল্যাপটপ প্রসেসর।

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post

250.250

250.250